চুল পড়া বন্ধ করার ঘরোয়া ৯ টি উপায়
চুল পড়ার সমস্যায় প্রায় সবাই ভোগেন। আমেরিকান একাডেমি অফ ডার্মাটোলজিস্টদের মতে, প্রতিদিন প্রায় ৯০ থেকে ১০০ চুল হারানো স্বাভাবিক। কখনও কখনও ঘুমের অভাব বা অতিরিক্ত চিন্তার কারণে অতিরিক্ত চুল পড়তে পারে। আবার অনেক জেনেটিক সমস্যার কারণেও অতিরিক্ত চুল পড়তে পারে।
তাছাড়া অনিয়ন্ত্রিত মানসিক চাপ, চুলের ভুল পণ্য ব্যবহার, মাথার ত্বকে সংক্রমণ, হরমোনের প্রভাব, PCOS বা ফাইব্রয়েড, থাইরয়েড, ডায়াবেটিস, ক্যান্সারের চিকিৎসা, বিপাকীয় সমস্যা ইত্যাদি। চুল পড়া বাড়াতে পারে। এই সাতটি কারণ ব্যাখ্যা করে যে কেন বেশিরভাগ মানুষ চুল পড়ার সমস্যায় ভোগেন। সমস্যাগুলো অনেকেরই অজানা। জেনে নিন কী-
১। চুল পড়ার কারণ
>> বেশির ভাগ মহিলাই চুল সোজা বা কার্ল করার জন্য অতিরিক্ত তাপ ব্যবহার করেন। এছাড়াও, প্রতিদিনের তাপ চিকিত্সা চুলের কেরাটিনের ক্ষতি করে। এ কারণে চুল ভঙ্গুর হয়ে যায়।
>> চুল খুব শক্ত করে বেঁধে রাখলে ফলিকল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে চুল পড়তে পারে। একে কখনও কখনও ট্র্যাকশন অ্যালোপেসিয়াও বলা হয়, একটি সমস্যা যাতে নতুন চুল গজায় না। এর মানে আপনার চুলের স্টাইল পরিবর্তন করা দরকার।
>> অনেকেই মাথার ত্বকে শ্যাম্পু, কন্ডিশনার এবং গরম পানি লাগান। কিন্তু এগুলো একেবারেই ভুল কাজ। আপনার চুলের আর্দ্রতা ধরে রাখতে আপনার মাথার ত্বকে সর্বদা ঠান্ডা জল লাগান।অতিরিক্ত শ্যাম্পুও আপনার চুলের জন্য ক্ষতিকর। এর ফলে মাথার ত্বকে অতিরিক্ত তেল তৈরি হয়, যা চুল পড়ার সমস্যাকে বাড়িয়ে দেয়।
>> শুধুমাত্র প্রয়োজন হলেই চুল আঁচড়ান। কখনোই অতিরিক্ত চুল আঁচড়াবেন না। ভেজা চুলের জন্য একটি চওড়া চিরুনি এবং শুষ্ক চুলের জন্য একটি ব্রিসল ব্রাশ ব্যবহার করুন।
>> চুল নিয়মিত ট্রিম করুন। আপনি যদি প্রতি 6-8 সপ্তাহে আপনার চুল কাটেন তবে এটি দ্রুত বৃদ্ধি পাবে। গাছকে যেমন ছাঁটাতে হয়, তেমনি আমাদের চুলকেও ছাঁটাই করতে হয়।
>> সালফেট, প্যারাবেনস এবং অ্যালকোহলযুক্ত চুলের পণ্য ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। এই ধরনের প্রসাধনী বেশিরভাগ মানুষের চুলকে শুষ্ক ও ভঙ্গুর করে তোলে। জৈব চুলের যত্ন পণ্য ব্যবহার করুন।
>> বর্তমান ব্যস্ত জীবনে সবাই মানসিক চাপ বা দুশ্চিন্তায় ভোগেন। মানসিক চাপ বাড়ার সাথে সাথে কর্টিসল হরমোনের নিঃসরণও বৃদ্ধি পায়। এটি প্রদাহ সৃষ্টি করে এবং চুলের বৃদ্ধি ধীর করে দেয়।
চুল পড়া বন্ধ করার ঘরোয়া উপায়
২। নারিকেল দুধের ব্যবহার করতে পারেন
চুল মজবুত ও প্রাণবন্ত করতে চুলে নারকেলের দুধ ব্যবহার করতে পারেন। নারকেলের দুধ ভিটামিন, খনিজ এবং ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ এবং চুলের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে। উপাদানটি মাথার ত্বকে ময়েশ্চারাইজ করে এবং চুলের বৃদ্ধিকে উৎসাহিত করে। চুলের চুলের যত্নে নারকেলের দুধ কিভাবে ব্যবহার করবেন? এটা জেনে রাখুন।
১। ১/২ কাপ নারকেল পেলে দুধের সাথে ১ টেবিল চামচ মধু এবং ১ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল মেশান। মিশ্রণ টি শিকড় থেকে শেষ পর্যন্ত প্রয়োগ করুন এবং ৩০ থেকে ৪০ মিনিট অপেক্ষা করুন। তারপর হালকা গরম জল এবং হালকা শ্যাম্পু দিয়ে হলুদ ধুয়ে ফেলুন।
২। আধা গ্লাস নারকেলের দুধের সাথে ২ টেবিল চামচ অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে চুলের গোড়ায় ঘষে নিন। ৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন এবং শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন ।
৩। আধা গ্লাস নারকেলের দুধের সাথে ২ টেবিল চামচ মেথির গুঁড়া মেশান। মিশ্রণটি আপনার চুলে লাগান, কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন এবং তারপর ধুয়ে ফেলুন।
৪। ১/২ কাপ নারকেলের দুধের সাথে ১ টেবিল চামচ আরগান ওয়েল মিশিয়ে ভেজা চুলে লাগান। কোন rinsing প্রয়োজন এতে আপনার চুল নরম হবে।
৩। নিম পাতার ব্যবহার
১। মধু নিম পাতার রস মিশিয়ে আগাল থেকে গড়া পর্যন্ত লাগান। ২০ মিনিট পর শ্যাম্পু লাগান আপনার চুলে চকচকে যোগ করতে সপ্তাহে তিন দিন এটি ব্যবহার করুন।
২। ১ চা চামচ আমলকির রস, এক চা চামচ নিম পাতার রস, এক চা চামচ লেবুর রস এবং প্রয়োজনমতো টক দই মিশিয়ে সপ্তাহে দুই দিন চুলে লাগান এবং শ্যাম্পু করার আগে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন।
৩। নিমপাতা ভালো করে বেটে চুলে লাগান। ১ ঘন্টা পর ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে একবার ব্যবহার করুন। চুল নরম ও স্থিতি স্থাপক হয়ে ওঠে এবং চুল পড়া কমে যায়।
৩। মেথির ব্যবহার
.৪। চুলের যত্নে জবা ফুলের ব্যবহার
জবা ফুল প্রাচীনকাল থেকেই চুলের যত্নে ব্যবহার হয়ে আসছে। জবা ফুল কার্যকর ভাবে চুল পড়া, খুশকি, এবং সূক্ষ্ম চুলের মত অনেক সমস্যার সমাধান করে। জবা ফুলে থাকা আমিনো অ্যাসিড চুলে কেরাটিন প্রোটিনের উপাদান বাড়ায়। চোরের স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা বজায় রাখে। এছাড়াও জবা ফুল মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে। এটি চুলের ফলিকল গুলোর পুষ্টি যোগায়। এটি নতুন চুলের বৃদ্ধিকে উৎসাহিত করে। এছাড়াও চুলের আরো অনেক উপকার করে এই জবা ফুল।
১। চুলের ঘনত্ব বৃদ্ধি করতে জবা ফুল
চুলের ঘনত্ব বাড়াতেও জবা ফুল বেশ কার্যকরী। জবা ফুলের পাপড়ির সঙ্গে নারকেল তেল মোশান। গোসলের ৩০ মিনিট আগে মাথায় লাগান। চুলের ঘনত্ব বাড়াতে এই মিশ্রণটি ম্যাজিকের মত কাজ করে।
২। রুক্ষ চুলের যত্নে জবা ফুল
রুক্ষ চুলের যত্নে অনন্য জবা ফুল। একটি কাচের বোতলে জবা ফুলের পাপড়ি ভরে নিন কিছু রোদে শুকানো কাঠবাদামের তেল যোগ করুন। ১০ থেকে ১৫ দিনের জন্য দুই থেকে তিন ঘন্টা সূর্যের আলোতে রাখুন। তারপর শ্যাম্পু লাগান এবং গোসলের আধাঘন্টা আগে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এমনকি রুক্ষ চুলও সিল্কের মতো মসৃণ হয়ে যায়।
৩। খুশকি দূর করতে জবা ফুল
খুশকির সমস্যায় ভুগছেন? জবা ফুল খুশকি কমাতে সাহায্য করে। এই ফুলের পাপড়ির সাথে তিলের তেল মোশান। গোসলের আধা ঘন্টা আগে মাথায় লাগান। তারপর শ্যাম্পু ব্যবহার করুন। খুব শীঘ্রই আপনি আপনার খুশকির সমস্যা থেকে আপনি মুক্তি পাবেন।
৫। পেঁয়াজের রস ব্যবহার
পেঁয়াজের রস চুলের জন্য খুবই উপকারী। এটি চুল ঘন করতে, খুশকি এবং চুলের ফুলিকল কমাতে খুবই কার্যকরী। নিয়মিত পেজের রস খেলে চুল পড়া কমে ও নতুন চুল গজায়।
১। চুলের বৃদ্ধি ঘটায়
পেঁয়াজের রসে সালফার থাকে। পেঁয়াজের রস এক ধরনের প্রোটিন যা নতুন সাহায্য করে। কোলাজেন উৎপাদন বাড়ায়। আপনার চুলে নিয়মিত পেঁয়াজের রস ব্যবহার চুলের ফুলিকল গুলিকে উজ্জীবিত করতে পারে। এতে চুল গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়।
২। খুশকি কমায়
পেঁয়াজের রসে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল এবং এন্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এতে খুশকির গঠন কমে যায়। এছাড়াও, এটি মাথার ত্বকে ব্যাকটেরিয়া সংক্রান্ত কমাতে সাহায্য করে।
৩। চুলের ফুলকলি কে পুষ্ট করে
পেঁয়াজের রসে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট জাত চুলের ফলিকল কে পুষ্ট করে। চুল অকালে পাকা রোধ করে।
৪। চুল মজবুত করা
পেঁয়াজের রসে সালফার থাকে যা এটি আপনার চুলের জন্য স্বাস্থ্যকর করে তোলে। নিয়মিত ব্যবহারে চুল ভাঙ্গা কমে যায় এতে আপনার চুল মজবুত ও স্বাস্থ্যবান হবে।
৫। রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে
পেঁয়াজের রস মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে। মাথায় অক্সিজেন সরবরাহ করে। এটি আপনার চুলের সামগ্রী স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
আপনি কি ভাবে পেঁয়াজ রস ব্যবহার করবেন?
পেঁয়াজের খোসা ছাড়িয়ে ছোট ছোট টুকরো করে কেটে নিন। এবার ব্লেন্ডার দিয়ে মিশিয়ে নিন। তারপর মিশ্রণটি ছেঁকে নিন। এই রস আপনার মাথার ত্বকে এবং চুলের গোড়ায় লাগান। কয়েক মিনিট মেসেজ করুন। পেঁয়াজের রস কমপক্ষে 30 মিনিট থেকে এক ঘন্টার জন্য বসতে দিন। তারপর শ্যাম্পু দিয়ে ভালো করে মাথা ধুয়ে ফেলুন। না হলে আপনার মাথা থেকে পেঁয়াজের গন্ধ বের হবে।
পেঁয়াজের রস ব্যবহারের আগে সর্বদা একটি এলার্জি পরীক্ষা করুন । এটি করার জন্য প্রথমে এটি মাথার ত্বকের একটু ছোট্ট অংশে প্রয়োগ করুন। পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে এটি ব্যবহার না করাই ভালো।
৬। চুলের যত্নে নিতে আমলকির ব্যবহার
চুলের হাজারো সমস্যা রয়েছে এবং প্রতিটি সমস্যা সমাধানের জন্য বিভিন্ন কৌশল রয়েছে। তবে বিশেষ করে বলেছেন, আমলকি ব্যবহার করে চুলের এই সমস্যাগুলোর অনেকটাই সমাধান করা যায়। সকালে আমলকির রস গরম পানির সাথে পান করলে শরীরে পর্যাপ্ত ভিটামিন সি পাওয়া যায়। শরীর, ত্বক, চুল সবকিছু ঠিক থাকে। কিন্তু এই বেশে অনেক সময় লাগে, যাইহোক, যেহেতু বর্ষাকালে প্রায় চুল পড়ে যায়, তাই আমলকির রস শুধু খাওয়া উচিত নয়। আমলকি থেকে তেল তৈরি করে মাথায় লাগালে বা রস ছেঁকে মাথায় লাগালে অনেক বেশি স্বাস্থ্য উপযোগী। চিকিৎসকেরা বলেছেন, আমলকি শুধু চুল পড়াই নয়, নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে । আর কি দরকার?
১। ঘনত্ব বাড়ানোর জন্য
আমলকি বিভিন্ন ভিটামিন এবং খনিজ সমৃদ্ধ এবং ফাইটোনিউটি্য়েন্টস সমৃদ্ধ। এতে মাথার রক্ত চলাচল বাড়ে। এর জন্য ধন্যবাদ, চুল দূরত্ব বৃদ্ধি পায়।
২। চুলের ক্ষতি এড়াতে
আমলকিতে রয়েছে ট্যানিন এবং ক্যালসিয়াম । এটি অতিরিক্ত তাপের কারণে চুলের ক্ষতি রোধ করতে পারে। এটি উল্লেখযোগ্যভাবে চুল পড়া কমায়।
৩। চুল পড়া নিয়ন্ত্রণ করুন
কয়েকদিন নিয়মিত আমলকির রস মাথায় লাগালে চুল পড়া নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। আমলকি এই ধরনের চুল পড়া রোধ করতে পারে, বিশেষ করে যখন হরমোনের মাত্রা কম বা বেশি হয়।
৪। পি এইচ ভারসাম্য বজায় রাখতে
বর্ষাকালে খুশকির সমস্যা বাড়ে। কারণ মাথার ত্বক অতিরিক্ত শুষ্ক হয়ে যায়। আমলকিতে রয়েছে কোলাজেন। যা চুলের ফলিকল কে পুষ্টি যোগায়। মাথার ত্বকের আদ্রতা ও বজায় থাকে।
৫। কন্ডিশনার হিসেবে কাজ করে
এছাড়াও আমলকি ভিটামিন ই সমৃদ্ধ। আমলকির ধোয়ার পর চুলের কন্ডিশনার হিসেবেও কাজ করে। আমলকি তেল বিশেষ করে মোটা এবং শুল্ক চুলের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী।
৭। ডিম ব্যবহারে চুল পড়া কমে
ডিমে প্রোটিন ও বায়োটিন থাকে। এগুলো চুলের জন্য খুবই উপকারী। হেয়ার মাস্ক তৈরি করতে ডিমের সাথে অন্যান্য উপাদান যেমন দই, অলিভ অয়েল, ইত্যাদি মিশিয়ে চুলে লাগান। আপনার চুলের উজ্জ্বলতা বাড়ায়। আপনার চুল মজবুত হবে। চুলের যত্নে ডিম বিভিন্নভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন -
১। একটি পাত্রে ডিমের কুসুম ভালোভাবে বিট করুন। অন্য একটি পাত্রে ২ টেবিল চামচ টক দই ভালোভাবে ফুটিয়ে নিন। এখন কটেজ পনিরের সাথে ডিমের কুসুম মিশিয়ে ভর দিয়ে ফেটিয়ে নিন। চুলের গোড়াই ভালোভাবে মেসেজ করুন। দুই থেকে তিন ঘন্টা পর চুল ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে দুইবার এটি ব্যবহার করলে আপনার চুল মজবুত ও চকচকে হয়ে উঠবে।
২। একটি পাত্রে পুরো ডিম ভালোভাবে বিট করুন। তারপর এক থেকে দুই চামচ মধু যোগ করুন। এবার মিশনটি চুলের গোড়ায় ভালোভাবে মেসেজ করুন । এক থেকে দুই ঘন্টা পর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে একবার এটি করলে চুলের পুষ্টি যোগায়।
৩। ডিমের সাদা অংশের সাথে অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে চুলে লাগাতে পারেন। এটি চুলকে মজবুত করতে সাহায্য করে।
৪। ডিমের সাদা অংশ ভালোভাবে বিট করুন, নারকেলের সাথে মিশিয়ে চুলের গোড়ায় লাগান। ২০ মিনিট পর শ্যাম্পু করুন। এতে চুলের রুক্ষতা দূর হবে।
৫। ডিম ভালো করে বিট করুন, পাকা কলা পেস্ট করুন এবং ভালোভাবে মেশান। তারপর সেখানে নারকেল তেল দেন। এবার মিশ্রনটি চুলে লাগিয়ে ২০ থেকে ৩০ মিনিট রেখে দিন। তারপর শ্যাম্পু দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। চুলের গোড়া মজবুত করে এবং তাদের বৃদ্ধিকে উৎসাহিত করে।
৮। সুষম খাদ্য নিশ্চিত করুন
তারা বলেন, চুল মানুষের মুখের সৌন্দর্য বাড়ায়। চুল সুন্দর না হলে আপনার সৌন্দর্য তেমন একটা ছড়াবে না। সঠিক পুষ্টি আপনার চুল সুস্থ রাখে। অন্যথায় এটি রুক্ষ এবং কুঁচকানো হয়ে যাবে। খুশকির মতো চুলের নানা সমস্যা রয়েছে। চুল পরিষ্কার না রাখলে যেমন চুল পড়ে, ঠিক তেমনি ঠিক মতো না খেলে চুল পড়ার সমস্যা দেখা দেয়।
স্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে আমরা যেমন সুস্থ থাকি, তেমনি আমাদের ত্বকও সুস্থ থাকে- এ কথা প্রায় সবাই জানেন। কিন্তু আপনি কি জানেন যে ডায়েট আপনার চুলের উপরও বড় প্রভাব ফেলে? শ্যাম্পু এবং চুলের কন্ডিশনার ছাড়াও আপনার ডায়েটও গুরুত্বপূর্ণ! বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খাবারের পুষ্টিগুণ চুল ও মাথার ত্বকে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। জেনে নিন চুলের জন্য ভালো কিছু খাবার।
ডিম
এটি প্রোটিনের একটি চমৎকার উৎস। এছাড়াও এটি জিঙ্ক, সেলেনিয়াম, সালফার এবং আয়রন সমৃদ্ধ। আয়রন চুলের গোড়ায় রক্ত ও অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করে। এছাড়াও, আয়রনের ঘাটতিজনিত রোগ যেমন অ্যানিমিয়াও মহিলাদের চুল পড়ার প্রধান কারণগুলির মধ্যে একটি।
নাড়ি
লেগুমগুলি উদ্ভিদ-ভিত্তিক প্রোটিন যা আপনার শরীরের কোষগুলির বৃদ্ধিকে সমর্থন করে। এটি চুলের কোষের বৃদ্ধিকে উল্লেখযোগ্যভাবে সমর্থন করে। চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে, চুলের উজ্জ্বলতা বাড়ায় এবং রুক্ষতা দূর করে। তাই আপনার মুদির তালিকায় ডাল যোগ করুন।
সামুদ্রিক মাছ
নোনা জলের মাছ ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ, যা আপনার চুলকে শক্তিশালী এবং দীর্ঘস্থায়ী করে। প্রায় সব সামুদ্রিক মাছেই ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে, যা চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। সার্ডিন, স্যামন, স্যামন এবং টুনা ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ। অ্যাভোকাডো এবং মিষ্টি কুমড়ার বীজেও রয়েছে প্রয়োজনীয় ফ্যাটি অ্যাসিড।
মুরগির মাংস
এই মাংস প্রোটিনের ভালো উৎস। এতে চুলের জন্য উপকারী উপাদান যেমন জিঙ্ক, আয়রন এবং বি ভিটামিন রয়েছে।
শাক
পালং শাকে প্রচুর পরিমাণে আয়রন এবং ফলিক অ্যাসিড রয়েছে। এই সবুজ সবজির নিয়মিত সেবন শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ায়, যা চুলের ফলিকলে অক্সিজেন পৌঁছাতে সাহায্য করে। এটি চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং আপনার মাথার ত্বক সুস্থ রাখে।
গাজর
এছাড়াও গাজরে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ রয়েছে যা চুলের জন্য ভালো। আপনার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় গাজর অন্তর্ভুক্ত করা চুল পড়া কমাতে সাহায্য করতে পারে।
পাকা টমেটো
টমেটোতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে এবং মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়। এটি চুলের ফলিকলগুলিকে উদ্দীপিত করে। পাকা টমেটো রস করে খান।
আমলকি
চুলের যত্নে আমরা সবাই আমলকি পাউডার ব্যবহার করি। কিন্তু 4 থেকে 5টি আমড়াকি লবণ দিয়ে চিবিয়ে খেলে চুল পড়া রোধ করা যায়। আমলকিতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন রয়েছে, যা নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে এবং চুল পড়া রোধ করে। তা ছাড়া শরীরের লোমও ঘন হয়।
শসা
শসা সিলিকা, সালফার এবং ভিটামিন এ সমৃদ্ধ। এই উপাদানটি চুলের বৃদ্ধি ঘটায় এবং চুল পড়া রোধ করে। কাঁচা শসার রস স্বাস্থ্যের জন্য ভালো এবং চুলের বৃদ্ধিকে উৎসাহিত করে। প্রতিদিন খোসা সহ একটি ছোট শসা খেলে নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।
কাঁচা মরিচ
লাল, হলুদ এবং সবুজ মরিচ হল ভিটামিন সি এর চমৎকার উৎস। ভিটামিন সি চুলের বৃদ্ধিকে উৎসাহিত করে এবং চুল ভেঙ্গে যাওয়া রোধ করে। স্বাস্থ্যকর চুলের জন্য, সালাদ এবং খাবারে গরম মরিচ ব্যবহার করুন।
মটরশুটি
কেরাটিন চুলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। মটরশুটি এবং শিম এই প্রোটিন সমৃদ্ধ। চুল মজবুত রাখতে নিয়মিত ডাল ও ডাল খেতে পারেন। আপনার চুল বাড়ার সাথে সাথে এটি স্বাস্থ্যকর এবং চকচকে হবে।
বাদাম
বাদামে রয়েছে বায়োটিন, যা চুলের ফলিকলকে শক্তিশালী করে, দ্রুত চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। কাজু বাদাম, গাছের বাদাম, চাইনিজ বাদাম, পেস্তা - এগুলিতে প্রচুর বায়োটিন থাকে। আপনার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় এক কাপ বাদাম অন্তর্ভুক্ত করুন। কয়েক মাসের মধ্যে আপনি আপনার পরিবর্তন দেখতে পাবেন।
আখরোট
আখরোট ওমেগা-৩ অ্যাসিড, বায়োটিন এবং ভিটামিন ই সমৃদ্ধ, যা চুলের কোষকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। আখরোট চুলের কন্ডিশনার হিসেবে কাজ করে। আখরোটে তামাও থাকে, যা আপনার চুলের প্রাকৃতিক রঙ বজায় রাখতে সাহায্য করে। আখরোট চুলের উজ্জ্বলতা বজায় রাখতেও সাহায্য করে।
লেবু
আপনার শরীরের ভিটামিন সি এর চাহিদা মেটাতে প্রতিদিন লেবু, কমলা বা অনুরূপ ফল খাওয়া উচিত। লেবু ভাতের সাথে বা পানি ও মধু মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে। এটি দ্রুত চুলের বৃদ্ধির জন্য খুবই কার্যকরী।
পেয়ারা, পেঁপে ও কমলালেবু
এই ফল ভিটামিন সি সমৃদ্ধ। ভিটামিন সি চুলের গোড়ায় রক্ত সরবরাহ করতে সাহায্য করে কৈশিক, বা সংকুচিত রক্তনালীকে। এটি চুল ভাঙ্গা রোধ করে।
আভাকাডো
অ্যাভোকাডো ভিটামিন বি এবং ই, সেইসাথে ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ। চুলের ভঙ্গুরতা এবং ক্ষতি রোধ করে। এটি চুলের গোড়াও মজবুত করে।
নাশপাতি
সুন্দর চুল, শরীরে সঠিক রক্ত সঞ্চালন, রক্তে সঠিক pH মান - এগুলো নাশপাতির সাথে ভালো যায় না। অতএব, আপনি সকালের নাস্তার মেনু সহ দিনের যে কোনও সময় এটি খেতে পারেন।
ব্লুবেরি
ব্লুবেরি আমাদের দেশে কম পরিচিত একটি ফল হলেও এই ফল চুলের জন্য খুবই উপকারী। এটি ভিটামিন সি সমৃদ্ধ, যা চুলের পুষ্টির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এটি মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে এবং চুলে পুষ্টি যোগায়। ভিটামিন সি-এর অভাব আপনার চুল রুক্ষ ও ভঙ্গুর করে তুলতে পারে। এছাড়াও, কিউই এবং স্ট্রবেরি ভিটামিন সি সমৃদ্ধ।
মিষ্টি আলু
মিষ্টি আলু ভিটামিন এ সমৃদ্ধ, যা মাথার ত্বকে প্রয়োজনীয় তেল উৎপাদনে সহায়তা করে। ভিটামিন এ-এর অভাবে মাথার ত্বকে চুলকানি এবং খুশকির মতো সমস্যা হতে পারে। গাজর, আম, মিষ্টি কুমড়া, এপ্রিকট এবং কলাও ভিটামিন এ-এর ভালো উৎস।
ঘৃতকুমারী
অ্যালোভেরার অ্যামিনো অ্যাসিড, প্রোটিন, খনিজ এবং ভিটামিন বিশেষ করে এ, সি এবং ই ক্ষতিগ্রস্থ চুলের জন্য প্রয়োজনীয়। অ্যালোভেরার পাতার ভেতরের খোসা থেকে সিরাপ তৈরি ও খাওয়া যেতে পারে।
বীজ
বায়োটিনে রয়েছে আয়রন, জিঙ্ক এবং ভিটামিন। বায়োটিন স্বাস্থ্যকর চুলের জন্য কোষ গঠন এবং প্রয়োজনীয় অ্যামিনো অ্যাসিড উত্পাদনে ভূমিকা পালন করে। অতএব, আপনি শস্য খাওয়ার মাধ্যমে আপনার বায়োটিনের চাহিদা মেটাতে পারেন।
পনির, দুধ, দুগ্ধজাত পণ্য
এই খাবারগুলিতে প্রোটিন, ভিটামিন বি-5 এবং ভিটামিন ডি রয়েছে। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে যে ভিটামিন ডি চুলের ফলিকলের স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে সাহায্য করে।
ওটমিল
বার্লিতে প্রোটিন, তামা, জিঙ্ক এবং বি ভিটামিনের মিশ্রণ রয়েছে। সকালের নাস্তায় ওটমিল খেলে চুল পড়া কম হয় এবং শরীর সুস্থ থাকে।
স্বাস্থ্যকর চুলের জন্য জল এবং তেল চিকিত্সা অপরিহার্য। প্রয়োজনীয় খাবারও চাই। আপনার মাথায় শুধু তেল বা শ্যাম্পু ঘষে চুল সুস্থ রাখবে না যদি এটি শরীর থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি না পায়। তাই স্বাস্থ্যকর খাবার খান এবং চুলের যত্ন নিন।
৯। অ্যালোভেরা ব্যবহারে চুল পড়া বন্ধ হয়
চুল পড়া বন্ধ করতে অ্যালোভেরা খুবই উপকারী। অ্যালোভেরা শুধু চুল পড়া বন্ধ করে না বরং চুলকে মসৃণ, কোমল ও চকচকে করে। আপনি মাত্র কয়েক ধাপে এই ভেষজটি আপনার চুলে লাগাতে পারেন। বিস্তারিত জেনে নিন।
১। প্রথমে অ্যালোভেরা জেল তৈরি করুন। আপনি নিজেই তৈরি করতে পারেন খাঁটি অ্যালোভেরা জেল। এটি করার জন্য, অ্যালো পাতা অর্ধেক ছিঁড়ে নিন। একটি চামচ দিয়ে জেলটি সরান এবং নাড়ুন। এটি মসৃণ এবং ব্যবহার করা সহজ হবে।
২। এখন অ্যালোভেরা জেল লাগানোর জন্য আপনার চুল প্রস্তুত করুন। এটি পরিষ্কার এবং স্যাঁতসেঁতে চুলে লাগান। চুল হালকা শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে তোয়ালে দিয়ে শুকানো যেতে পারে। আবার, পরিষ্কার চুলে জল স্প্রে করে এবং একটু ভিজিয়ে অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করতে পারেন।
৩। আপনার আঙ্গুল বা ব্রাশ ব্যবহার করে আপনার চুলের গোড়ায় অ্যালোভেরা জেল লাগান। 5-10 মিনিটের জন্য ধীরে ধীরে ম্যাসাজ করুন। এই ম্যাসাজ চুলের গোড়ায় রক্ত চলাচল বাড়ায় এবং তাদের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে।
৪। চুল ধোয়ার আগে কমপক্ষে 30 মিনিট অপেক্ষা করুন। আপনি চাইলে সারারাত রেখে পরের দিন ধুয়ে ফেলতে পারেন। হালকা গরম পানি দিয়ে একটি হালকা শ্যাম্পু ব্যবহার করুন।
৫। দ্রুত ফলাফলের জন্য, অ্যালোভেরা জেল সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার ব্যবহার করুন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url