যীশু খ্রীষ্ট শীঘ্রই আসবেন

এটা আমরা কিভাবে জানি? কারণ তিনি বলেছেন, আমার পিতার বাড়িতে থাকবার অনেক জায়গা আছে। তা না থাকলে আমি তোমাদের বলতাম, কারণ আমি তোমাদের জন্য জায়গা ঠিক করতে যাচ্ছি। আমি গিয়ে তোমাদের জন্য জায়গা ঠিক করে আবার আসবো আর আমার কাছে তোমাদের নিয়ে যাব, যেন আমি যেখানে থাকি তোমরাও সেখানে থাকতে পারো। যোহন ১৪:২,৩ পদ

যীশু খ্রীষ্ট শীঘ্রই আসবেন

পবিত্র বাইবেল যখন প্রহর আগমনের কথা বলে তখন মৃত্যুর কথা বলে না বা পবিত্র আত্মার আগমনের কথা বলে না। কিন্তু প্রভু যীশু খ্রীষ্টের আগমনের কথায় বলে। তার সেই আগমন দেখা যাবে। 

খ্রিস্টের স্বর্গরোহনের সময়ে শিষ্যরা যখন তাকে স্বর্গে চলে যেতে দেখছিলেন তখন দুইজন স্বর্গদূত তাদের কাছে এসে বললেন, গালীলের লোকেরা, এখানে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে রয়েছ কেন? যাকে তোমাদের কাছ থেকে তুলে নেওয়া হল, সেই প্রভু যীশুকে যেভাবে তোমরা স্বর্গে যেতে দেখলে সেই ভাবেই তিনি ফিরে আসবেন। প্রেরিত ১:১১ পদ

যীশু কিভাবে আসবেন 

যেভাবে তিনি স্বর্গে গিয়েছেন ঠিক সেই ভাবেই আসবেন। শিষ্যরা যীশুকে স্বর্গে ফিরে যেতে দেখেছিলেন এবং যীশু যখন আবার আসবেন তখন যারা বেঁচে থাকবে তারা তাকে দেখবে। 

যীশু কখন আসবেন 

তিনি যখন আসবেন তখন কি হবে? অবিশ্বাসীদের কি হবে আর খ্রিস্ট বিশ্বাসীদের অবস্থা কি হবে? এ প্রশ্নগুলো বিশেষ দরকারি, আর আমরা এই পাঠে এগুলোর উত্তর খুঁজে বের করব। 

যীশু কখন আসবেন? 

প্রভু যীশু কখন আসবেন কেউ জানে না। প্রভু যীশু বলেছেন, সেই দিন ও সেই সময়ের কথা কেউ জানে না। মথি ২৪:৩৬ পদ 

যেহেতু আমরা জানি না যে, প্রভু ঠিক কখন আসবেন সেহেতু তার আগমনের জন্য আমাদের সব সময়ই প্রস্তুত থাকা উচিত। প্রকৃত খ্রিষ্টানকে সর্বদা প্রভু যীশুর আগমনের অপেক্ষায় থাকতে হবে। 

যীশুর আগমনের চিহ্ন কি? 

যদিও আমরা যীশুর আগমনের সঠিক সময় জানি না, তবুও জানি যে, তিনি শীঘ্রই আসবেন। কি করে তা জানি? তার আগমনের বিষয়ে পবিত্র বাইবেলে যেসব চিহ্নের উল্লেখ আছে তা থেকে জানতে পারি। আসুন আমরা দেখি এর সব চিহ্ন বা লক্ষণ কি ভাবে পূর্ণ হচ্ছে। 

১। যুদ্ধ 

যুদ্ধ সবসময়ই হয়ে আসছে, কিন্তু প্রভু যীশু বলেছেন যে, শেষ সময় খুব বেশি সংখ্যক যুদ্ধ হয়ে সময়টাকে চিহ্নিত করবে। তিনি বলেছেন "এক জাতি অন্য জাতির বিরুদ্ধে এবং এক রাজ্য অন্য রাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে" (মথি ২৪:৭ পদ) । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ছাড়াও আরো ৪৫ টারো বেশি যুদ্ধ সম্প্রতি হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে। 

যীশু খ্রীষ্ট শীঘ্রই আসবেন

২। দুর্ভিক্ষ, মহামারী, ভূমিকম্প 

প্রভু যীশু বলেছেন, অনেক জায়গায় দুর্ভিক্ষ ও ভূমিকম্প হবে"(মথি ২৪:৪৭ পদ)। ১০৫৭ সন থেকে ১৯৩২ সনের অর্থাৎ ৮৭৫ বৎসরের মধ্যে পৃথিবীতে কেবলমাত্র ২৮ বার বড় রকমের ভূমিকম্প হয়েছে। কিন্তু গত ৫০ বছরে ৫০ বারেরও বেশি ভীষণ রকমের ভূমিকম্প হয়েছে এবং লক্ষ লক্ষ লোক এই ভূমিকম্পের ফলে মারা গিয়েছে। গত ২০ বছরে এত বেশি ভূমিকম্প বিজ্ঞানীরা রেকর্ড করেছেন যা আগে কখনো হয়নি। 

"তোমাদের কানে যুদ্ধের আওয়াজ আসবে আর যুদ্ধের খবরাখবরও তোমরা শুনতে পাবে। কিন্তু সাবধান! ভয় পেয়ো না, কারণ এইসব হবেই। কিন্তু তখনও শেষ নয়। এক জাতি অন্য জাতির বিরুদ্ধে এবং এক রাজ্য অন্য রাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে"। মথি ২৪:৬,৭ পদ

৩। ইসায়েল

খ্রীষ্টের জন্মের ৬০০ বছর আগে ইসরাইল কে একটা দেশ বলে স্বীকার করা হত না। ইহুদিরা পৃথিবীর শেষ প্রান্ত পর্যন্ত বিক্ষিপ্ত ভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়েছিল। কিন্তু পবিত্র বাইবেলে ভবিষ্যৎবাণী করা হয়েছিল যে, শেষ দিনে উচ্চতার লোকদের তাদের নিজের দেশে ফিরিয়ে আনবেন এবং যে মরুভূমি এত কাল ধরে অনুর্বর ছিল তা "ফুটন্ত গোলাপের মতো হবে।"এই বানী পূর্ণ হয়েছে।

৪। যিরূশালেম

প্রভু যীশু শেষ দিনের বিষয়ে আরো সুনির্দিষ্ট চিহ্ন দিয়েছেন। এই চিহ্ন যিরুশালেমের সম্বন্ধে। প্রভু যীশু বলেছেন, তলোয়ার দিয়ে তাদের মেরে ফেলা হবে এবং সমস্ত জাতির মধ্যে তারা বন্দী হিসেবে ছড়িয়ে থাকবে। যতদিন না অযিহূদীদের সময় পূর্ণ হয় ততদিন পর্যন্ত অযিহুদীরা যিরূশালেম কে তাদের পায়ের নিচে মারাতে থাকবে। লুক ২১:২৪ পদ

যিরূশালেম অযিহূদীদের দ্বারা ১৯০০ বছর ধরে শাসিত হয়েছে। কিন্তু ১৯৬৭ সালে ইসরায়েল যিরূশালেম নগরী দখল করেছে। যিরূশালেম এখন যিহূদীদের দ্বারা শাসিত হচ্ছে। প্রভু যীশুর আগমন যে সন্নিকট এটা তার আরো একটা চিহ্ন।

৫। দশটি রাজ্য 

পবিত্র বাইবেল বলে, যে দেশ অতি প্রাচীনকালে রোম সাম্রাজ্যের মধ্যে ছিল সেই ১০ টি দেশ আবার একত্রে মিলিত হবে। বর্তমানে ইউরোপীয় সাধারণ বাজারের মধ্যে দশটি দেশ একত্রিত হয়েছে। 

৬। শান্তি প্রচেষ্টা 

শেষ দিনের আর একটা চিহ্ন হলো শান্তি সম্মেলনের প্রচেষ্টা ব বৃদ্ধি। কিন্তু শান্তি চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে ও ব্যর্থ হতেই থাকবে যে পর্যন্ত না যীশু আসনে। তিনিই শান্তিরাজ, আর যতদিন না তিনি রাজত্ব করবেন ততদিন পৃথিবীতে শান্তি হবে না। পবিত্র বাইবেলে লেখা আছে,"যখন কোন শান্তি নেই তখন নবীরা বলে যে, শান্তি আছে।" যিহিস্কেল ১৩:১০ পদ

৭। পরিভ্রমণ ও জ্ঞান 

আজকাল লোক ট্রেনে, স্টিমারে, গাড়িতে ও প্লেনে শুধু আসে যায়। পবিত্র বাইবেল শেষ কালের কথা বলছে,"সেই সময়ের মধ্যে অনেকে যেখানে সেখানে যাবে এবং জ্ঞানের বৃদ্ধি পাবে।"দানিয়েল ১২:৪ পদ 

৮। অতিশয় দুষ্টতা 

জগতের অবস্থা দিন দিন ভালো হওয়ার চাইতে বরং খারাপ হচ্ছে। এটা প্রপোজিশন বাক্যপূর্ণতা সাধন, "নূহের সময়ে যেমন হয়েছিল মনসুপুত্রের সময়ও তেমনি হবে।" লুক ১৭:২৬ পদ

নোহের সময়ে জগতের অবস্থা কেমন ছিল? সেই সময়ে পৃথিবীতে দুষ্টতা ভীষণ বৃদ্ধি পেয়েছিল। পবিত্র বাইবেল বলে, "দেখলেন পৃথিবীতে মানুষের দৃষ্টতা খুবই বেড়ে গেছে আর তার অন্তরের সব ভাবনা চিন্তা সব সময়ই কেবলই মন্দের দিকে ঝুঁকে আছে।" আদি পুস্তক ৬:৫ পদ

৯। ভৌতিকতা, যাদুবিদ্যা 

জন্ম, ঠিকুজি, ভবিষ্যৎবাণী, যাদুবিদ্যা এবং ভৌতিকতা বর্তমানের আকর্ষণ। এসব আর একটা চিহ্ন যে, আমরা শেষ দিনে বাস করছি। পবিত্র বাইবেল বলে, "পবিত্র আত্মা পরিষ্কারভাবে বলেছেন, ভবিষ্যতে কিছু লোক খ্রিস্টীয় ধর্ম বিশ্বাস থেকে দূরে সরে যাবে এবং ছলনাকারী আত্মা ও মন্দ আত্মাদের শিক্ষার দিকে ঝুঁকে পড়বে"। ১ তীমথিয় ৪:১ পদ

যীশু খ্রীষ্ট শীঘ্রই আসবেন

১০। ধর্ম ভ্রষ্টতা 

পবিত্র বাইবেল আমাদের বলে যে, শেষ দিনে যীশু আবার ঠিক আগে, ধর্ম ভ্রষ্টতার চিহ্ন দেখা যাবে। ধর্ম ভ্রষ্টতা, মানে "সত্য থেকে সরে যাওয়া"। এই ভবিষ্যৎবাণী পূর্ণ হয়েছে। অনেক বাইবেল স্কুলের শিক্ষক ও অধ্যাপকেরা আর বিশ্বাস করে না যে, পবিত্র বাইবেল ঈশ্বর নি:শ্বসিত বাক্য। এই সমস্ত লোকেরা ঈশ্বরের অলৌকিক কাজকে হালকা করে, তারা কুমারের গর্ভে যিশু খ্রিস্টের জন্ম অস্বীকার করে, যীশু খ্রীষ্ট কে ঈশ্বর বলতে অস্বীকার করে এবং এসব যারা বিশ্বাস করে তাদের কথা অবিশ্বাস করতে শেখায়। 

সাবধান বাণী 

যারা পবিত্র বাইবেলের এইসব মহা সত্যকে অস্বীকার করে তাদের শিক্ষা গ্রহণ করবেন না। পবিত্র বাইবেল তাদের বিষয়ে বলে, "এ কথা মনে রেখো যে, শেষকালে ভীষণ সময় উপস্থিত হবে। বাইরের চেহারা দেখলে মনে হবে যেন ঈশ্বরকে তারা কত না ভক্তি করে, কিন্তু আসলে ঈশ্বর ভক্তির শক্তিকেই তারা অস্বীকার করে। এইরকম লোকদের কাছ থেকে দূরে থেকো। ২ তীমথিয় ৩:১,৫ পদ

এইসব চিহ্ন আমাদেরকে কি বলে? বলে যে, প্রভু যীশু শীঘ্রই আসছেন। তিনি আজও আসতে পারেন। প্রভু যীশু বলেছেন, "যখন তোমরা এইসব ঘুটতে দেখবে তখন বুঝতে পারবে যে ঈশ্বরের রাজ্য কাছে এসে গেছে। লুক ২১:৩১ পদ

প্রভু যীশু শীঘ্রই আবার আসবেন! 

প্রভু যীশুর আগমন অবিশ্বাসীদের জন্য মহা ভয়ের ও বিচারের সময়। কিন্তু বিশ্বাসীদের জন্য প্রভুর আগমন "আশা"এই কথার সঙ্গে সংযুক্ত ।

১। এটা একটা আনন্দ ভরা আশা 

যীশু যখন আসবেন তখন তিনি আমাদের দেহকে তার গৌরবান্বিত পুনরুত্থিত দেহের মত করে পরিবর্তন করবেন। পবিত্র বাইবেল বলে, "আমাদের মহান ঈশ্বর এবং উদ্ধার কর্তা যীশু খ্রীষ্টের মহিমাপূর্ন প্রকাশ্যে আনন্দ ভরা আশা পূর্ণ হওয়া জন্যই আগ্রহের সঙ্গে অপেক্ষা করি। গীত ২:১৩ পদ

২। এটাই একটা সান্তনা পূর্ণ আশা 

অবিশ্বাসীরা তাদের প্রিয়জনদের আর কখনো না দেখার আশায় সমাধিস্হ করে । কিন্তু বিশ্বাসীরা তেমন না। যীশু যখন আসবেন, তখন যীশুতে বিশ্বাস আমাদের প্রিয়জনেরা মৃত্যু অবস্থা থেকে জেগে উঠবে এবং আমরা চিরকালের জন্যই তাদের সঙ্গে মিলিত হব। ১ থিষলনীকীয় ৪:১৩-১৮ পদ পড়ুন। 

৩। এটা একটা পবিত্রকরণের আশা 

খ্রিস্টানেরা যারা সত্যিই বিশ্বাস করে যে, প্রভুর আগমন সন্নিকট, তারা নিজেদের "পবিত্র করে", অর্থাৎ তারা নিজেদের প্রভুর আগমনের জন্য প্রস্তুত করে। কেন? কারণ তারা জানে যে, তাদের জীবনের এসব দেওয়ার জন্য তারা শীঘ্রই প্রভু যীশুর সামনে দাঁড়াবে। পবিত্র বাইবেল বলে, "খ্রিস্টের বিচার আসনের সামনে আমাদের সকলের সবকিছু প্রকাশ করা হবে যেন আমরা প্রত্যেকে এই দেহে থাকতে যা কিছু করেছি তা ভালো হোক বা মন্দ হোক, সে হিসাবে তার পাওনা পাই।" ২ করিন্হীয় ৫:১০ পদ

খ্রিস্টের বিচরনের সম্মুখে, উদ্ধার পাবার পরে আমরা যা করেছি তা বিচার হবে। 

এই বিচার পাপের শাস্তির বিচার নয়। যীশু খ্রীষ্ট নিজ ক্রুশের উপর মরে আমাদের পাপের শাস্তি গ্রহণ করেছেন। এই বিচারের অর্থ এই নয় যে, আমরা যদি অকৃতকার্য হই তবে ঈশ্বর আমাদের স্বর্গ থেকে বের করে দেবেন। যারা যীশুখ্রীষ্টের উপর বিশ্বাস দ্বারা উদ্ধার পেয়েছে, যীশু যখন আসবেন কেবল তাদেরই তিনি স্বর্গে নিয়ে যাবেন। একবার আমরা স্বর্গে যেতে পারলে আর আমাদের বের করে দেওয়া হবে না।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url