সাজনে পুষ্টিগুণ এবং উপকারিতা ও অপকারিতা


সাজিনা হচ্ছে পরিবারের অতি পরিচিত এবং সুস্বাদু একটি বৃক্ষ। সাজনা গাছ গ্রাম অঞ্চলে চাষ করা হয়। সাজনা কাঁচা লম্বা ফল সবজি হিসেবে খাওয়া হয়, পাতা খাওয়া হয় শাক হিসেবে। খরা ও গ্রীষ্ম প্রধান অঞ্চলের একটি উদ্ভিদ। ডাল ও বীজের মাধ্যমেও বংশবিস্তার করলেও আমাদের দেশে সাধারণত ডালের মাধ্যমে বংশবিস্তার করানো হয়।
সাজনে পুষ্টিগুণ এবং উপকারিতা ও অপকারিতা

বাংলাদেশে অতি পরিচিত এক সবজি সাজনা বা সজনা পাতা। মূলত বিভিন্ন ধরনের খাবারের আনুষাঙ্গিক উপকরণ হিসেবে আমাদের দেশে এর ব্যবহার দেখা যায়। তবে এই সবজিতে আছে প্রচুর পরিমাণ পুষ্টি উপাদান।

সাজনের ব্যবহার

সাজনে পাতা, শিকড় এবং অপরিণীত শুটি সবজি হিসেবে খাওয়া হয়। এছাড়া এই গাছের বাকল, শুটিং, পাতা, বাদাম, বীজ, শিকড়, এবং ফুলসহ গোটা অংশই খাওয়া যায়। সবজির চেয়ে এর পাতার গুনাগুন আরো বেশি। সজনে পাতায় নয় ধরনের অত্যাবশকীয় অ্যামিনো এসিড সহ ৩৮ শতাংশ বিদ্যামান। এছাড়াও এতে রয়েছে আয়রন, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ও ভিটামিন এ, বি এবং সি। সাজনে বীজে থাকে প্রোটিন এবং ওমেগা তিন ফ্যাটি অ্যাসিড।

কিন্তু সাজানোর কার্যকারিতা কেবল স্বাস্থ্যের জন্যই ভালো বলেই শেষ করলে মূল্যায়ন হবে না বলেই ম্যাগাজিনটিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া সাজনের বীজে থাকা আমিষ ব্যাকটেরিয়াকে জমাটবদ্ধ করে আলাদা করে ফেলে। তাই পানীয় জল বিশুদ্ধ করতে বীজের গুঁড়া করে পাওয়া পাউডার ব্যবহার করা যেতে পারে। পুষ্টিবিদ সামিয়া তাসমিন বলেন, সাজনায় প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সাইড এবং অ্যামিনো এসিড থাকায় এটি ত্বকের এবং চুলের জন্য খুব উপকারী।

সাজনের পুষ্টি

বিজ্ঞানীরা পুষ্টির দিক দিয়ে সাজনে কে পুষ্টির ডিনামাইট আখ্যায়িত করে বলেন এই গাছটি থেকে পুষ্টি ঔষধি গুণ ও সারা বছর ফলন পাওয়া যায় বিধায় বাড়ির আঙিনায় এটি একটি মাল্টিভিটামিন বৃক্ষ এর পুষ্টিগুণ খাদ্যপুযোগী। প্রতি 100 গ্রামে খাদ্য শক্তি ক্যালোরি ৪৩ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ২৪ মিলিগ্রাম, আয়রন 0. 2 মিলিগ্রাম, জিংক ০. ১৬ মিলিগ্রাম, ভিটামিন এ ২৬ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি১ ০.০৪ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি২ ০.০৪ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি ৬৯.৯ মিলিগ্রাম।

সাজনে পাতার গুনাগুন

বিজ্ঞানীরা মনে করেন সাজনের পাতা পুষ্টিগুণে বিদ্যমান। নিরামিষভোজীরা সাজানোর পাতা থেকে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হতে পারেন। পরিমাণের ভিত্তিতে তুলনা করলে একই ওজনের সাজনে পাতায় কমলালেবুর সাত গুণ ভিটামিন সি,দুধের চার গুণ ক্যালসিয়াম এবং দুই গুণ আমিষ, গাজরে চারগুণ ভিটামিন এ, কলার তিনগুণ বিদ্যমান।
সাজনে পুষ্টিগুণ এবং উপকারিতা ও অপকারিতা

বিজ্ঞানীরা আরো বলেন, সাজানোর পাতায় ৪২ % আমির, ১২৫% ক্যালসিয়াম, ৬১% ম্যাগনেসিয়াম, ৪১% পটাশিয়াম, ৭১% লৌহ, ২৭২% ভিটামিন এ এবং ২২% ভিটামিন সি সহ দেহের আবশ্যকীয় বহু পুষ্টি উপাদান থাকে। এক চামচ শুকনা সাজনা পাতার গোড়া থেকে এক থেকে দুই বছর বয়সী শিশুদের অত্যাবশ্যকীয় ১৪% আমিষ, ৪০% ক্যালসিয়াম ও ২৩% লৌহ এবং ভিটামিন এ সরবরাহ হয়ে থাকে। দৈনিক ছয় চামচ সজনে পাতার গুড়া একটি গর্ভবতী মায়ের চাহিদার সবটুকু ক্যালসিয়াম ও আইরন সরবরাহ করতে সক্ষম।

ডায়াবেটিস রোগীর জন্য সজনে পাতার গুড়োর উপকারিতা


যুগ যুগ ধরে বিভিন্ন চিকিৎসায় সজনে গাছের পাতা, ফুল, বীজ, এবং শিকড় ব্যবহার হয়ে আসছে। সজনে গাছের সবকিছুই স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। দীর্ঘস্থায়ী বিভিন্ন রোগ যেমন ডায়াবেটিস ব্যাকটেরিয়া এমনকি জয়েন্টের ব্যথা প্রতিরোধও সজনের ডাঁটা কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

১। সজনে পাতায় রক্ত থাকা শর্করা মাত্রা কমিয়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।

২। এতে এন্টি ইনফ্লেমেটরি এবং এন্টি অক্সিডেন্ট উপাদান গুলি রয়েছে যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।

৩। এছাড়াও এই পাতায় প্রচুর পরিমাণে আসকরবিক এসিড থাকে, যা শরীরে ইনসুলিন নিঃসরণ বাড়ায় যার ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যায়।

৪। সজনের পাতাতে থাকা বিভিন্ন ভিটামিন এবং খনিজ রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে, এতে থাকা বিভিন্ন প্রোটিন রক্তে শর্করার মাত্রা কমায়। তাই এটি ডায়াবেটিসের আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য খুবই উপকারী।

৫। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ছয় জন ব্যক্তিদের নিয়ে একটি গবেষণা করা হয়। সেখানে দেখা গেছে যে খাবারে ৫০ গ্রাম সাজনে পাতা যোগ করলে রক্তে শর্করা বৃদ্ধি ২১% কমে যায়।

ডায়াবেটিস রোগীরা সজনে কিভাবে খাবেন জেনে নিন

সজনে পাতা সবার জন্য খাওয়ার নিয়ম প্রায় একই, সজনে পাতার গুঁড়া এক চামচ এক গ্লাস পানির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে খাওয়া যায় অথবা চায়ের পাতার মতো ব্যবহার করা যায় এমনকি শুকনা পাতার গুড়া ফুটানো পানিতে দিয়েও চা বানানো যায়।
সাজনে পুষ্টিগুণ এবং উপকারিতা ও অপকারিতা

সজনে পাতায় আইসো থায়োসায়ানেট থাকে। ফলে নিয়মিত সজনে পাতা খাওয়া হলে তা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমায় এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সজনে পাতার চা বেশ উপকারী।

সজনে পাতার অপকারিতা সমূহ

১। সাজনে পাতার গুড়াতে প্রচুর পরিমাণ মিনারেল ভিটামিন এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকে তাই খুব বেশি পরিমাণ সজনের পাতার গুড়া গ্রহণ করলে আমাদের খিদে কম হতে পারে এবং পেটে গ্যাস্ট্রিক বা ডায়রিয়া সমস্যা হতে পারে।

২। সজনে পাতাতে কিছু প্লেটো কেমিক্যাল থাকে যার জন্য সজনে পাতা একদম ছোট বাচ্চা এবং গর্ভবতী মায়েদের না খাওয়াই উচিত।

৩। ব্লাড প্রেসারের ঔষধ খাওয়ার পাশাপাশি নিয়মিত সজনার পাতার গুঁড়ো সেবন করলে ব্লাড প্রেসার কমে যায়।

৪। সজনে পাতা সংলগ্ন ডালগুলো আমাদের দেহের জন্য ক্ষতিকর। এই ডাল গুলোতে ক্ষতিকারক উপাদান থাকে, যা যেগুলো আমাদের দেহের ইমিউনিটি সিস্টেমের ক্ষতি করে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url