কলার পুষ্টিগুণ , উপকারিতা ও অপকারিতা
কলা এক প্রকারের বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় ফল। সাধারণত উষ্ণ জলবায়ু সম্পূর্ণ দেশসমূহে কলা ভালো জন্মায়। এটি যেমন সুস্বাদু তেমনি পুষ্টিকর। কাঁচা ও পাকা কলা দুটোই স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। অনেকেই মনে করেন, কলাতে ক্যালরি বেশি হওয়া তা ডায়েটর জন্য ভালো না। কিন্তু এ ধারণা ভুল। পুষ্টির দিক থেকে সেরা একটি খাবার কলা।
এটি খেতেও সুস্বাদু। কলাতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও অন্যান্য পুষ্টিগুণ রয়েছে। কলা হলো ফলমূলের মধ্যে সবচেয়ে সহজলভ্য একটি ফল। কলা বাজারের যেকোনো দোকানে সস্তায় কিনতে পাওয়া যায়। কলাতে ক্যালরি ছাড়াও আরো পুষ্টি উপাদান রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, কলাতে ভিটামিন,আয়রন, খনিজ ইত্যাদির মত পুষ্টি রয়েছে। এই সমস্ত উপাদান গুলো আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। তবে কলা নিয়ে একেক জনের একেক ধারনা রয়েছে।
আরো পড়ুনঃ কচু শাকের পুষ্টিগুন, উপকারিতা ও অপকারিতা কলার বৈজ্ঞানিক নাম হল MUSA এছাড়াও বিভিন্ন প্রজাতির কলার বিভিন্ন আলাদা আলাদা নাম রয়েছে। আমাদের দেশে-
১। সাগরকলা
২। চম্পা কলা
৩। সবড়ি কলা
৪। কাঁঠালি কলা ও
৫। বাংলা কলা বেশ জনপ্রিয়।
কলার পুষ্টিগুণ
কলা যেমন পুষ্টি চাহিদা পূরণ করে, তেমনি কলার রয়েছে বেশ কিছু উপকারী গুণ।
সাধারণত প্রতি ১০০ গ্রাম পরিমাণ কলায় যে খাদ্যগুণ আছে তার বিশ্লেষণ নিম্নরূপ:
উপাদানের নাম পরিমাণ
পানি ৭০.১%
আমিষ ১.২%
চর্বি ০.৩%
খনিজ লবণ ০.৮%
আঁশ ০.৪%
শর্করা ৭.২%
আসুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক কলার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে-
কলার ১০ টি উপকারিতা
১। কিডনি সুরক্ষায় কলা
কলার রয়েছে বহুবিধ গুণাবলী। এতে যে পরিমাণ পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে যা কিটনিকে সঠিকভাবে তার কার্যক্রম
পরিচালনা করতে দারুন ভাবে সাহায্য করে। কলার পটাশিয়াম লেভেল রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ সহ কিডনির কার্যক্ষমতা, নিয়ন্ত্রণ করতে বেশি উপকারী।
এছাড়াও দৈনিক কলা খেলে কিডনিতে পাথর হওয়া, মূত্রনালী ইনফেকশন হওয়া, মস্তিষ্কের স্টক হওয়ার সম্ভাবনা, আলসারের ঝুঁকি কমে যায়। প্রতিদিন কলা খেলে কিডনি রোগ আক্রান্তে হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ৫০% কমে যায় ।
২। ওজন হ্রাস এবং বৃদ্ধি করতে কলার ভুমিকা
ওজন কমানো এবং বৃদ্ধি করতে রয়েছে কলার দারুণ উপকারী ভূমিকা। কলায় যে রেজিস্ট্রেস্ম ও পেকটিন ফাইবার রয়েছে তার জন্য কলা হজম হতে দেরি হয়। ফলে একটি কলা খেলে তা অনেকক্ষণ পর্যন্ত পেট ভরে রাখে। এই জন্য যারা ওজন কমাতে চায় তাদের দৈনিক অন্তত একটি করে কলা খাওয়া উচিত। ওজন বৃদ্ধি করার জন্য একটু কম পাকা কলা খাওয়া উত্তম। যদিও কম পাকা কলাতে এই রেসিস্ট্রেস বেশি থাকে যার ফলে ক্ষুধা মন্দ হয়ে ওজন কমার সম্ভমনা রয়েছে। তবে প্রতিদিন সকালের নাস্তায় কলার পাশাপাশি নির্দিষ্ট পরিমাণ গরুর দুধ ও ডিম খেলে ওজন বাড়তে সাহায্য করে।
৩। ত্বকের যত্নে কলা
ত্বকের যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রেও কলার রয়েছে কার্যকরী ভূমিকা। কলায় আন্টি অক্সিডেন্ট এবং ফটোকেমিক্যাল থাকে তা ত্বক শরীর এবং চুলকে পুষ্টি প্রদান করে। কলা ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে ব্রণ দূর করতে, মুখের কালো দাগ ও বলিরেখা দূর করতে দারুন ভাবে সাহায্য করে। বিভিন্ন ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করে কলা কে ব্যবহার করে ত্বকের যত্ন নেওয়ার কাজে কলাকে ব্যবহার করা যেতে পারে।
এছাড়াও কলায় এক ধরনের ম্যাঙ্গানিজ থাকে, যা আমাদের শরীরে ম্যাঙ্গানিজের যে চাহিদা রয়েছে তা পূরণ করে। ম্যাঙ্গানিজ ত্বকের কোলাজেন গঠনে ভূমিকা রাখে এবং ত্বক ও অন্যান্য কোষ কে ফ্রি রেডিকেল জনিত ক্ষতিকর হাত থেকে রক্ষা করে।
৪। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে কলার ভূমিকা
যে সকল ব্যক্তির কোষ্ঠকাঠিন্য জনিত সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য কাঁচা কলা ওষুধের মত কাজ করে। এখানে আমাদের দেশে কোষ্ঠকাঠিন্য জনিত সমস্যার প্রধান উপায় হিসেবে কাঁচা কলার ব্যবহার হয়ে থাকে। কলাতে অন্যান্য পুষ্টিগুণের পাশাপাশি রয়েছে ফাইবার। যা কোষ্ঠকাঠিন্যতা দূর করতে বেশ কার্যকরী। এছাড়াও কলা হজম শক্তি বৃদ্ধি কোষ্ঠকাঠিন্য, পাকস্থলীর আলসার ও গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা অনেক ক্ষেত্রে দূরীভূত হয়।
৫। শক্তিবর্ধক হিসেবে কলার ভূমিকা
শক্তিবর্ধক হিসেবে কলা একটি দারুণ উপকারী খাদ্য। একটি কলাতে অনেক পরিমাণ এনার্জি পাওয়া যায় তার জন্য খেলোয়াড়রা খেলা চলাকালীন সময়ে কলা খেতে দেখার ঘটনা খেলার মাঠে অস্বাভাবিক কিছুই না। এছাড়াও কলাতে রয়েছে
অ্যামিনো এসিড, শর্করা, এবং বিভিন্ন খনিজ পদার্থ। কলার এই উপাদানগুলো দেহের প্রয়োজনীয় শক্তি বৃদ্ধির জন্য সহায়ক। এছাড়াও গবেষণায় দেখা গেছে প্রতিদিন যারা অন্তত একটি করে কলা খায় তাদের স্মৃতিশক্তি তুলনামূলকভাবে আগের চেয়ে প্রখর হয়। তাই একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের দৈনিক একটি করে কলা খাওয়া উচিত।
৬। তারুণ্য ধরে রাখতে কলার ভূমিকা
তারুণ্য ধরে রাখতে কোলাজেনের কোন বিকল্প নেই। কলার ম্যাগনেসিয়াম ত্বকের কোলাজেন গঠনে এবং ত্বককে ফ্রি রেডিকেল জনিত ক্ষতির হাত থেকে সুরক্ষা করে। কলার মধ্যে যে সকল ভিটামিন ও অন্যান্য খনিজ পদার্থ রয়েছে তা আমাদের কোষগুলোকে দ্রুত বাড়িয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করে।
৭। গর্ভবতী নারীদের জন্য কলার ভুমিকা
কলায় যে ভিটামিন বি বা পাইরিডক্যিন থাকে তা গর্ভবতী নারীদের বমি বমি ভাব থেকে মুক্তি দেয়। এছাড়াও গর্ভাবস্থায় কলা খেলে-
১। শিশুর মধ্যে জন্মগত ত্রুটি কমে যায়
২। অ্যানিমিয়া প্রতিরোধ সাহায্য করে
৩। শিশুর স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশে সাহায্য করে
৪। হাড়ের বিকাশের সাহায্য করে
৫। গর্ভবতী নারীদের ক্ষুধা যোগায় যোগায়
এছাড়াও গর্ভকালীন সময়ে নারীদের শরীর দুর্বল থাকে এবং বিভিন্ন ধরনের সমস্যাও দেখা যায় শরীরে। সেই দুর্বলতা কাটানোর জন্য কলা খাওয়া যেতে পারে। তবে গর্ব অবস্থায় কলা খাওয়ার ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে কলা খাওয়াটা উত্তম।
৮। বিষন্নতা ও মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে কলার ভূমিকা
কলায় ক্যালসিয়াম ম্যাগনেসিয়ামের পাশাপাশি থাকে ট্রিপটোফ্যান নামক এক ধরনের অ্যামিনো এসিড। কলা খাবার পর এই অ্যাসিড রক্তে মিশে গিয়ে রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে শেরোটনিন নামক এক ধরনের উপাদান তৈরি করে যা আমাদের আনন্দদায়ক অনুভূতি সৃষ্টি করার জন্য কাজ করে। তাই মনকে ফুরফুরে করার জন্য মানসিক চাপ হতাশ এবং বিষন্নতা দূর করার জন্য কলা খাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৯। আলসার নিরাময়ে কলার ভূমিকা
পেটে আলসার হয়ে থাকলে ডাক্তাররা কলা খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কারণ কলায় যে মিউসিলেজ থাকে তা পাকস্থলীর ভেতরের প্রাচীরে ক্ষতিগ্রস্ত মিউকাস পর্দা কে সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে। এছাড়াও খাদ্য হজম করতে আমাদের পাকস্থলীতে যে পরিমাণে হাইড্রোক্লোরিক এসিড নির্গত হয় যা থেকে পরবর্তীতে আলসারসহ বিভিন্ন রোগ হয়ে থাকে,
সেই হাইড্রোক্লোরিক এসিড কে দুরিভুত করার জন্য কলার ক্ষার এর সাথে বিক্রিয়া করে পাকস্থলীর আমলতা ভাব দূর করে। নিয়মিত কলার সেবনে পাকস্থলী সম্পর্কিত এই সকল সমস্যা থেকে নিরাময় লাভ করা যায়।
১০। রক্তস্বল্পতা দূর করতে কলার ভূমিকা
আমাদের শরীরের রক্তস্বল্পতা তখনই তৈরি হয়, যখন আমাদের শরীরে হিমোগ্লোলিনের মাত্রা কমে যায়। কলাতে যেহেতু প্রচুর পরিমাণ আয়রন থাকে, তাই এটি সহজেই রক্তে মিশে গিয়ে শরীরের হিমোগ্লোরিনের মাত্রা বাড়িয়ে তোলে। এছাড়াও কলার ভিটামিন বি-৬ রক্তের লোহিত রক্তকণিকার সংখ্যা বৃদ্ধি করে।
কলার অপকারিতা
কলার যেমন রয়েছে অনেক উপকারিতা তেমনি রয়েছে বেশ কিছু অপকারিতা।
কলার অপকারিতার মধ্যে কিছু হল
আরো পড়ুনঃভিটামিন ই ক্যাপসুল মুখে ব্যবহারের নিয়ম
১। কলা একটি অধিক মাত্রায় পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাদ্য। তাই অতিরিক্ত কলা খেলে হার্টের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই দিনে একটি অথবা সর্বোচ্চ দুইটির বেশি কলা খাওয়া উচিত না। এছাড়াও যাদের শ্বাসতন্ত্রে সমস্যা আছে, তাদের বেশি মাত্রায় কলা খেলে সেই সমস্যা আরো বাড়ে যেতে পারে।
২। কলা একটি শর্করা সমৃদ্ধ নরম খাবার, যা খাবার পরে জমে থাকে দাঁতের ফাঁকে ফোকারে। তাই কলা খাওয়ার পরে ব্রাশ করা উত্তম।
৩। গর্ভবতী মহিলাদের কলা খাওয়ার ব্যাপারে আবশ্যক সতর্ক থাকতে হবে। কলাতে প্রচুর পরিমাণ অ্যামিনো এসিড থাকে। তাই অতিরিক্ত কলা খেলে রক্তনালি তে সমস্যা হতে পারে।
৪। রাতে কলা খাওয়ার ব্যাপারে একটু সতর্ক থাকা উচিত। কলা একটু হজম হতে দেরি হয় বলে, রাতে কলা খেলে তা হজম প্রক্রিয়া বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
৫। এছাড়া কলা একটি ঠান্ডা জাতীয় ফল। তাই যারা দীর্ঘদিন যাবত সর্দি কাশি ও ঠান্ডাতে ভুগছেন তাদের জন্য এই সময় কলা না খাওয়াই উচিত।
৬। খালি পেটে কলা খাওয়া যাবে। খালি পেটে কলা খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হতে পারে।
৭। কলায় প্রচুর পরিমাণ সুগার থাকে। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের কলা খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে পাকা কলা না খাওয়াটাই উচিত।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url