কম্পিউটারের কাজ ও কম্পিউটারের ইতিহাস সম্পর্কে জেনে নিন
কম্পিউটার একটি ইলেকট্রনিক যন্ত্র। কম্পিউটার শব্দটি গ্রিক শব্দ থেকে এসেছে। Compute শব্দ থেকে computer কথাটির উৎপত্তি হয়েছে। কম্পিউটার শব্দের অর্থ গণনাকারী যন্ত্র। প্রাথমিক অবস্থায় এটি শুধু গণনার কাজে ব্যবহার করা হতো। বর্তমানে কম্পিউটার দিয়ে গাণিতিক, যৌক্তিক ও সিদ্ধান্ত মূলক কাজ করা যায়।
কম্পিউটার এমন একটি যন্ত্র, যার মধ্যে কোন ডাটা ইনপুট করলে নির্ভুল ফলাফল আমরা পেতে পারি। অর্থাৎ যার মাধ্যম গাণিতিক, যৌক্তিক, সিদ্ধান্ত মূলক, কোন ডাটা পেরন করলে সেটা প্রতিক্রিয়াকরণ হওয়ার পর ফলাফল হিসাবে পাওয়া যায়, তাকে কম্পিউটার বলে।
কম্পিউটারের কাজ
কিবোর্ড, মাউস ইত্যাদি ইনপুট ডিভাইসের মাধ্যমে কোন ডাটা কম্পিউটারে ইনপুট করলে তা প্রসেস করে থাকে। প্রসেস কৃত সকল ডাটা কম্পিউটার বাইনারি নাম্বার অর্থাৎ 0 এবং এক পদ্ধতি পরিবর্তন করে কাজ করে থাকে। কম্পিউটার ডাটা গ্রহণ, স্টোর ও এনালাইসিস করে এর ফলাফল মনিটর, মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর ইত্যাদি আউটপুট ডিভাইসের মাধ্যমে দেখায় এবং প্রিন্টারের মাধ্যমে প্রিন্ট করা যায়। ডাটা প্রসেসিং এর উপর ভিত্তি করে কম্পিউটারের বিভিন্ন ধরন কাজের ধরন প্রকৃতি ও ডাটা প্রসেসিং-এর ভিত্তিতে কম্পিউটার কে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন এনালগ কম্পিউটার , ডিজিটাল কম্পিউটার , হাইব্রিড কম্পিউটার ।
Analogy ইংরেজি শব্দ থেকে Analog কথাটি এসেছে। এনালগ কথার অর্থ হচ্ছে সাদৃশ্য। চাপ, তাপ, তরল, প্রবাহ ইত্যাদি পরিবর্তনশীল ডাটার জন্য সৃষ্টি বৈদ্যুতিক তরঙ্গ পরিমাপ করে এনালগ কম্পিউটারের কার্যক্রম পরিচালিত হয় এবং সম্পাদিত ফলাফল মিটার বা কাটার সাহায্যে প্রকাশ করে। পেট্রোল পাম্পের জ্বালানি সরবরাহ ও মূল্য নির্ণয়ের কাজে গাড়ি উড়োজাহাজ মহাকাশযান ইত্যাদির গতিবেগ পরিমাপের জন্য এনালক কম্পিউটার ব্যবহার করা হয়।
ডিজিটাল কম্পিউটার
ডিজিট (Digit) শব্দ থেকে ডিজিটাল শব্দ উৎপত্তি। ডিজিটাল কম্পিউটারে বর্ণ, সংখ্যা, সংকেত, প্রতীক ইত্যাদি ইনপুট হিসেবে ব্যবহার হয়। ডিজিটাল কম্পিউটার ০ (শূন্য) এবং ১ (এক) এই দুইটি বাইনারি ডিজিট দিয়ে সব ধরনের কাজের প্রক্রিয়াকরণ সম্পাদন করে। ডিজিটাল কম্পিউটার খুবই সূক্ষ্ম ও নির্ভুল ফলাফল প্রদান করতে পারে।
হাইব্রিড কম্পিউটার
এনালগ ও ডিজিটাল এই দুই শ্রেণীর কম্পিউটারের প্রযুক্তির সমন্বয়ে মিশ্রণ প্রযুক্তিতে তৈরি কম্পিউটার কে হাইব্রিড কম্পিউটার বলে। হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ারে এ ধরনের কম্পিউটার ব্যবহার হয়। এক্ষেত্রে অ্যানালগ অংশ রোগীর রক্তচাপ, হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া, শরীরের তাপমাত্রা ইত্যাদি উপাত্ত গ্রহণ করে এবং ডিজিটাল অংশে ব্যবহার করার জন্য যথাযোগ্য সংখ্যা সংকেতে রূপান্তর করে তা ডিজিটাল অংশে প্রেরণ করে। ডিজিটাল অংশ প্রাপ্ত তথ্যের উপর ভিত্তি করে রোগীর অবস্থা প্রকাশ করে।
কম্পিউটারের শ্রেণীবিভাগ
আকার ও ক্ষমতার ভিত্তিতে কম্পিউটার কে চারটি শ্রেণীতে ভাগ করা যায়-
সুপার কম্পিউটার সবচেয়ে শক্তিশালী, দ্রুত গতি সম্পন্ন এবং ব্যয়বহুল। আকৃতিগত দিক হতে সর্ববৃহৎ এই শ্রেণীর কম্পিউটার গুলোর তথ্য সংরক্ষণ ক্ষমতা, কার্য সম্পাদনের বা তথ্য প্রক্রিয়া করণের গতি অবিশ্বাস্য। সূক্ষ্ম বৈজ্ঞানিক গবেষণা, বিপুল পরিমাণ তথ্য বিশ্লেষণ, নভোযান, জংলি বিমান এবং ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ন্ত্রণ, মহাকাশ গবেষণা, পরমাণু চুল্লি ইত্যাদি ক্ষেত্রেও সুপার কম্পিউটার ব্যবহার করা যায়।CRAY -1, CYBER-205 সুপার কম্পিউটারের উদাহরণ।
মেইনফ্রেম কম্পিউটার
মেইনফ্রেম কম্পিউটার একটি বড় কম্পিউটার, যার সাথে অনেকগুলো ছোট কম্পিউটার যুক্ত করে একসাথে শতাধিক লোক কাজ করতে পারেন। এ ধরনের কম্পিউটারে একাধিক প্রক্রিয়াকরণ অংশ থাকে। বড় বড় প্রতিষ্ঠান এ ধরনের কম্পিউটার ব্যবহার করে থাকে। ব্যাংক, বীমা, অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান এবং বৈজ্ঞানিক কর্ম তৎপরতা পরিচালনা, নিয়ন্ত্রণ, বিশ্লেষণ এবং মূল্যায়নের জন্য মেইনফ্রেম কম্পিউটার ব্যবহার হয়।UNIVAC 1100/01, IBM-4341 ইত্যাদি কম্পিউটার এ শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত।
মিনি কম্পিউটার
মেইনফ্রেম কম্পিউটারের চেয়ে আকারে ছোট এ কম্পিউটার টার্মিনালের মাধ্যমে একসাথে অনেক ব্যবহারকারী ব্যবহার করতে পারে। সাধারণত শিল্প, গবেষণা, ব্যাংকিং কার্যক্রম এ ধরনের কম্পিউটার ব্যবহার হয়। উদাহরণ- PDP-8, IBMS/34,NCR S/9290, PDPII ইত্যাদি।
মাইক্রো কম্পিউটার
মাইক্রো কম্পিউটার হচ্ছে মাইক্রোপ্রসেসর দিয়ে তৈরি সর্বাপক্ষ ব্যবহার কম্পিউটার। সাধারণত একজন লোক একটি মাইক্রোকম্পিউটার ব্যবহার করতে পারেন বলে একে পার্সোনাল কম্পিউটার বা পিসি ও বলা হয়। এ ধরনের কম্পিউটার তুলনামূলকভাবে দামে কম, সহজে বহনযোগ্য এবং রক্ষণাবেক্ষণা সহজ হওয়ার ফলে ব্যবহারকারীদের মাঝে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। ব্যক্তিগত, ব্যবসায়িক, দাপ্তরিক, সরকারি, বিনোদনমূলক কর্মকাণ্ডে মাইক্রোকম্পিউটারের ব্যবহার উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে।
IBM PC, APPLE, Macintosh ইত্যাদি মাইক্রো কম্পিউটারের উদাহরণ।
কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য
দ্রুতগতি ঃ বৈজ্ঞানিক সিগন্যাল দ্বারা সব কাজ করে তাই কম্পিউটার খুব দ্রুততে কাজ করতে পারেন। কম্পিউটার ব্যবহার করে এক সেকেন্ড কয়েক কোটি যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ, করে ফলাফল প্রদান করা যায়।
নিভুলতাঃ কম্পিউটার এমন একটা মেশিন যা দিয়ে মানুষের দেওয়া সূত্র ও যুক্তির মাধ্যমে কম্পিউটার তার ফলাফল প্রদান করে। কখনো ভুল করে না কম্পিউটার। শতকরা ১০০ ভাগ কম্পিউটারে নির্ভরতা রয়েছে।
সূক্ষ্মতা ঃ কম্পিউটারের স্মৃতিশক্তি অনেক বেশি। তাই ঘরে বসে নির্ভুল ভাবে গাণিতিক ক্রিয়া কলাপ করতে পারে। এই কারণে কম্পিউটারের সূক্ষ্মতা অনেক বেশি ধরে নেওয়া হয়।
বিশ্বাসযোগ্যতা ঃ কম্পিউটার নির্ভুল ও সুক্ষভাবে কাজ করতে পারেন। কাজ করার জন্য কম্পিউটার মানুষের নির্দেশ আনুসারে ব্যবহার হয়। কম্পিউটার নিখুঁতভাবে কাজ করে।
ক্লান্তিহীনতাঃ কম্পিউটার একটি যন্ত্র। এই যন্ত্রের একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ক্লান্তিহীনতা । কম্পিউটার দিনরাত ২৪ ঘন্টা কাজ করতে পারে। কম্পিউটার কোন ক্লান্তি বা বিরক্ত বোধ প্রকাশ করে না।
স্মৃতিশক্তিঃ কম্পিউটারের নিজস্ব স্মৃতিশক্তি রয়েছে। কম্পিউটারের প্রোগ্রামের নির্দেশে প্রয়োজনীয় ডাটা প্রক্রিয়াকরণ মাধ্যমে সংরক্ষিত করে রাখে।
স্বয়ংক্রিয়তা ঃকম্পিউটার স্বয়ংক্রিয়তা ভাবে কাজ করতে পারে। এ কারণে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে মানুষের পরিবর্তে কম্পিউটার কে ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও অনেক ক্ষেত্রে কলকারখানায় বিস্ফোরক গবেষণায় কম্পিউটার ব্যবহার করা হয়।
কম্পিউটারের ব্যবহার
শিক্ষা ক্ষেত্রে কম্পিউটারের ব্যবহার
বর্তমান শিক্ষা ক্ষেত্রে কম্পিউটারের গুরুত্ব অপরিসীম। এখন প্রায় সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রাইমারি স্কুল থেকে শুরু করে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা যন্ত্র হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এর প্রয়োজনীয় সকল কাজ যেমন এডমিট কার্ড ,মার্কসিট বিভিন্ন পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়ন ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। বাসায় থেকে কম্পিউটার মাধ্যমে যেকোনো প্রতিষ্ঠানের ভর্তির কাজ করুন সম্পূর্ণ করা সম্ভব।
বিজ্ঞান গবেষণয় কম্পিউটার ব্যবহার
বিজ্ঞান গবেষণায় কম্পিউটারের গুরুত্ব ও ভূমিকা অপরিহার্য। বিজ্ঞানীরা কম্পিউটার ব্যবহার করে যে কোন জটিল গণনা বা কাজ কে অতি দ্রুত সম্পন্ন করতে পারে । বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য রিসার্চ ও ডাটা সঞ্চয় করে রাখতে কম্পিউটারের অবদান অপরিসীম। বিজ্ঞান গবেষণায় যেসব কম্পিউটার ব্যবহার করা হয় সেই সব যন্ত্র উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন হয়ে থাকে ।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে কম্পিউটারের ব্যবহার
বর্তমান সময়ে সুপার কম্পিউটার ব্যবহার করে বিভিন্ন উপগ্রহ বা স্যাটেলাইটগুলো নিয়ন্ত্রণ করা হয়ে থাকে। যার জন্য আমরা বেতার ও টেলিভিশন প্রোগ্রামগুলো সরাসরি উপভোগ করতে পারি , অন্যদিকে সহজে ইন্টারনেট ইমেল ফেসবুক ইউটিউব ইত্যাদি ওয়েবসাইট ব্যবহারের ফলে খুব কম সময়ের মধ্যে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত খুব দ্রুত তথ্য আদান প্রদান করা তথ্য আদান প্রদান করা সম্ভব ।
বিনোদনের ক্ষেত্রে কম্পিউটারের ব্যবহার
বর্তমান বিশ্বে বিনোদন জগতে কম্পিউটারের গুরুত্ব অতুলনীয়। কেননা আজকাল সকল মানুষ কম্পিউটার ও ল্যাপটপ ব্যবহার করে নানা রকমের গান, সিনেমা, নাটক এবং কম্পিউটারের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের গেম খেলে বিনোদন উপভোগ করে থাকে । এছাড়াও অধিক ক্ষমতা সম্পন্ন কিছু কম্পিউটারের মাধ্যমে এনিমেশন ও স্পেশাল এফেক্ট এর ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের চলচ্চিত্র নির্মাণ করে এবং নতুন নতুন কম্পিউটার গেম তৈরি করা হয়ে থাকে।
ব্যবসার ক্ষেত্রে কম্পিউটারের ব্যবহার
ডিজিটাল সময়ে কম্পিউটারের ব্যবহার ছাড়া ব্যবস্থা বাণিজ্য করা প্রায় অসম্ভব । বিজ্ঞাপন থেকে শুরু করে ব্যাংকিং সিস্টেম পর্যন্ত কম্পিউটারের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায় । এছাড়াও শেয়ার বাজারে কম্পিউটারের গুরুত্ব বলে শেষ করা যাবে না যেমন রেল ও বিমানের টিকিট বুকিং , অ্যাকাউন্টিং সিস্টেম প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে সব পত্র রাখার কাজে কম্পিউটার ব্যবহার হচ্ছে ।
প্রশাসনিক কাজে কম্পিউটারের ব্যবহার
বর্তমান বিশ্বে দেশের সমস্ত কাজেই অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রশাসনিক কাজে কম্পিউটার ব্যবহার অপরিহার্য । বিভিন্ন দেশে তাদের অর্থনৈতিক পরিকাঠামো পর্যবেক্ষণ করতে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রী গনের মধ্যে ভিডিও কনফারেন্স করতে কম্পিউটারের ব্যবহার হচ্ছে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url